সুব্রত আপন, মহেশখালীঃ
সকাল হলে দেখা মেলে গোরকঘাটা বাজার সংলগ্ন জলদাস পাড়ার গেইটে হুইল চেয়ার বসে থাকেন প্যারালাইসিস রোগী কালাচান জলদাস। পরিবারে রয়েছে স্ত্রী ও দুই সন্তান। সন্তানরা যার যার বিয়ের পরেই আলাদা হয়ে গেছে। খবর নিয়ে জানা গেছে সন্তানের পিতা মাতার তেমন খোজ খবর রাখেন না। কালাচান জলচান জলদাস জন্মসূত্রে সন্দীপের বাসিন্দা। জেলে কাজ করতে এসে বিগত ৩৫ বছর আগে জনৈক সিন্ধু জলদাস এর মেয়ে কল্পনা জলদাস কে বিবাহ করেন। বিবাহ পরবর্তী শাশুড় বাড়ীতে ঘর জামাই হিসেবে থেকে যান। সংসারের একজনের আয়ের উপর সংসার চলতো। জীবনে সংগ্রামের এ পথে ৩৫ বছরের অধিক সময়কাল জেলে কাজের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছেন। ৩৫ বছরের জেলে জীবনে সংসারের খরচ নির্বাহের পর একটা মাথা গুজার টাই কেনা সম্ভব হয়নি।
কালাচান জলদাস মহেশখালী পৌরসভাস্থ ৭নং ওয়ার্ডের গোরকঘাটা জেলে পল্লীতে বাস করেন এবং ৭নং ওয়ার্ডের ভোটার ও বাসিন্দা। মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিনে তার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, টিনের চালা আর বেড়ার ঘেরা একটি ভাঙাচোরা একটি ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। বিগত ৩ বছর আগে প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন কালাচান জলদাস। বাড়ির উঠানে হুইল চেয়ারে বসে পায়চারি করছিলেন তিনি। হাত পা অবসের পাশাপাশি এখন কথাও বলতে পারেন না।
পাড়া প্রতিবেশীতে সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, কালাচানের স্ত্রী কল্পনা জলাদাসও মানষিক রোগি। মাঝে মাঝে তার অসুস্থতা বেড়ে গেলে একেবারে পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। কল্পনা জলদাসের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে পরিবারে উপার্জনশীল ব্যক্তি না থাকায় দিনে মানুষের বাড়ীঘরে কাজকর্ম ও বাজারঘাটে কাচা সবজি কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। দীর্ঘদিন তার স্বামী অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছেন। প্রতিদিন সর্বোচ্চ পান একশত থেকে দেড়শ টাকা। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। প্রত্যেকদিন কাজ কর্ম করে যা টাকা পান তা দিয়ে সংসার চালানো যেখানে কষ্ট সেখানে স্বামীর চিকিৎসা ও ওষুধপত্র কেনা সম্ভব হয় না। ফলে স্বামী বিনা চিকিৎসায় আস্তে আস্তে মৃত্যুর দুয়ারে কড়া নাড়ছে। আফসোস করে বলেন এখনো পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোন সংস্থা থেকে তেমন কোন আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। অনেক আবেদন-নিবেদনের পরে একটি হুইল চেয়ার পেয়েছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অসহায় অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কল্পনা জলদাস জানান, সরকারি-বেসরকারি কোন সংস্থা থেকে যদি কোন অনুদান পাওয়া যেত তবে আমার স্বামীকে উন্নত চিকিৎসা করাতাম। তিনি ভাল হয়ে গেলে আগের মত উপার্জন করতে পারতেন। আমাদের সংসারে আবারো সচ্ছলতা ফিরে আসতো।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত রোগের মধ্যে প্যারালাইসিস একটি। প্যারালাইসিস মূলত রোগ নয় বরং রোগের ফলে সৃষ্ট এমন একটি অবস্থা যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অথবা নির্দিষ্ট কোন অঙ্গ ধীরে ধীরে অথবা হঠাৎ করেই অবশ হয়ে যায় এবং সে অংশের মাংসপেশিও তাদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। প্যারালাইসিসের দরুন এবং এর সুচিকিৎসার অভাবে বা অপচিকিৎসার ফলে ধীরে ধীরে রোগীর অবস্থা আরও ভয়ানক আকার ধারণ করে এবং কালক্রমে তা পঙ্গুত্ব থেকে রোগীকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। তাই যথা সম্ভব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা না নিলে চিরতরে পঙ্গুত্ববরণের সম্ভবনা থাকে।
মহেশখালী পৌরসভার কাউন্সিলর শামসুল আলম বাদশা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কালাচান জলদাস এর পরিবার সম্পর্কে তিনি আগেই জেনেছেন। ওই পরিবারকে পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য সহায়তা করার আশ্বস্ত করেন।