এদিকে, লিয়াকতসহ ওই চেকপোস্টের ২০ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হবে।
শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাত ৯টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে সাবেক মেজর সিনহা রাশেদ খান ও তার সহযোগী সিফাতকে থামায় পুলিশ। তল্লাশির এক পর্যায়ে ফাঁড়ি ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত সাবেক মেজর সিনহা রাশেদ খানকে তিন রাউন্ড গুলি করেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ময়নাতদন্তে দেখা গেছে তিনটি গুলির একটি সিনহার বুকে ও দুটি গলার নিচে বিদ্ধ হয়।
পুলিশের দাবি, সিনহা তাদের দিকে পিস্তল তাক করেছিলেন। জব্দ তালিকায় একটি বিদেশি পিস্তল ও ৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার দেখিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, সিনহা কমান্ডো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। চৌকস অফিসার হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স এসএসএফের দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, এমন একজন অফিসারের কথিত অস্ত্র তাক করার পরেও বুকে ও গলায় গুলি খেয়ে নিহত হওয়ার বক্তব্য কতটা বিশ্বাসযোগ্য। প্রশ্ন উঠেছে, হাসপাতালে নিতে দেরি হওয়া নিয়েও।
জানা গেছে, গুলিবর্ষণের পৌনে দুই ঘণ্টা পর সাবেক মেজর সিনহাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। রাত নয়টায় গুলির ঘটনা ঘটে। ৯টা ৪৫ মিনিটে পুলিশ একটি মিনি পিকআপ আনে। এর পনেরো মিনিট পর হাসপাতালের দিকে রওনা হ্য় পিকআপ ভ্যান। ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর পৌঁছালে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গুলি ও হাসপাতালে দেরিতে নেয়া নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে তা জানতে জেলা পুলিশ সুপারকে ফোন করা হলে তিনি কেটে দেন।
সাবেক সেনা কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় লিয়াকতসহ বাহারছড়া চেকপোস্টের ২০ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, ইন্সপেক্টর লিয়াকতের বিরুদ্ধে শামলাপুর এলাকার সাধারণ মানুষের নানা অভিযোগ রয়েছে। একটি অভিযোগের সাক্ষ্য দেয়ার জন্য প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরকে এক সপ্তাহ আগে জেলা পুলিশ ডেকেছিল। যদিও নানা কারণে তিনি যেতে পারেননি।
এদিকে, এ ঘটনায় শনিবার (০১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার বাজার এরিয়া কমান্ডারের প্রতিনিধি। কমিটিকে সরেজমিন তদন্ত করে ঘটনার কারণ, উৎস অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় ঠিক করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কী জানা গেছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তদন্ত চলার সময় কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা জানান। তদন্ত নিরপেক্ষ হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
জানা গেছে, সাবেক মেজর সিনহা ২০১৮ সালে স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান। তিনি অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন উপসচিব মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ খানের ছেলে। গত ৩ জুলাই স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম আ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের তিন ছাত্র-ছাত্রীসহ ‘just go’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভ্রমণ ভিডিও তৈরি করতে কক্সবাজার যান সিনহা।
শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাতে শামলাপুরের একটি পাহাড়ি এলাকায় শ্যুটিং শেষে এক সঙ্গীসহ ফিরছিলেন তিনি। সঙ্গী সিফাতকে ঘটনাস্থল থেকে ও শ্যুটিং টিমের সদস্য এক নারীকে নীলিমা রিসোর্ট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শনিবার (০১ আগস্ট) আদালতে হাজির করা হলে, বিচারক তাদের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সূত্র:-সময় টিভি নিউজ