আ ন ম হাসান:
মাত্র কয়েক বছর আগেও বসবাসের জন্য ছিল মাত্র একটি ছনের ছাউনি ঘর। পিতা কথিত হাফেজ কবির ও ছোট ভাই ফজলুল হক (প্রকাশ লেদারা) মিলে তিনজনই চায়ের দওখান চালাতো হোয়ানক ইউনিয়নের পানির ছড়া বাজারে। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা ছিলো তাদের। পিতার ছিল না তেমন কোনো সহায় সম্পত্তি। আয়ের উৎসব বলতে ছিল শুধু ভাড়া করা দোকানে একটি চায়ের দোকান। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতো হঠাৎ করেই বদলে গেল তাদের জীবন। আর এই জীবন বদলের খেলায় হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে ইয়াবা ব্যবসাকে।
বেশিদিন যেতে না যেতেই পানির ছড়া বাজারের চায়ের দোকন ছেড়ে বেকার হয়ে পড়ে ইউনুস। শুকরিয়া পাড়া গ্রামের শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত বর্তমান মহেশখালী সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের অফিস সহকারী সাবেক সাংসদ হামিদুর রহমান আজাদের খুবই ঘনিষ্ঠ সহচর নজরুল ইসলামের সাথে বিয়ে হয় ইউনুসের বড় বোন কোহিনুর আক্তারের সাথে।
তখন ইউনুসের ছিল না কোনো চাকরি। বোন জামাই নজরুল ইসলাম ডেস্টনি কোম্পানির মহেশখালী এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার সুবাদে বড় বোনের কাছ থেকে ধার করা টাকা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান ইউনুুস। সেখানেও শুরু করে ভেলকিবাজি। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, ভিসা রিনিউ না করে অবৈধভাবে বসবাস করতে থাকেন। সৌদি পুলিশের ধাওয়া খেয়ে আটক এড়াতে বহুতল ভবনে রাজমিস্ত্রীর কাজের ফাঁকে লাফ দিয়ে হাত পা ভেঙে দেশে ফিরে আসেন।
দুই বছর পর্যন্ত প্রবাসে উপার্জিত টাকা দিয়ে চিকিৎসা করে কোনো রকম সুস্থ হয়ে আবারও মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান ৷ সেখান থেকে বছর কয়েক আগে দেশে ফিরে এসে পিতা,ছোট ভাই ফজলুর হক মিলে কক্সবাজার শহরে আবারও চায়ের দোকান শুরু করেন। কক্সবাজার শহরে দোকান করার সুবাদে পরিচয় হয় বিভিন্ন ইয়াবা কারবারিদের সাথে। সেই থেকে শুরু ইউনুসের আঙুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার ইনিংস ৷
সুযোগ বুঝে সময়ের সদ্ব্যবহার করে প্রবাসে উপার্জন করা টাকার বিনিময়ে সবাইকে ম্যানেজ করে বড় মহেশখালী ইউনিয়ন যুবলীগের কথিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর বক্সের সাথে হাতে হাত রেখে যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে শুরু করেন মাটি বিক্রি ও স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার ঠিকাদারি কাজ।
পৈত্রিক সম্পত্তি বলতে ছিল শুধু মাত্র কয়েক শতাংশ বসতভিটা ও ছনের ছাউনি মাটির ঘর। কিন্তু মাত্র এই কয়েক বছরের ব্যবধানে ইউনুস হয়ে যান কক্সবাজার শহরের পাহাড় তলী এলাকায় দু’টি বসতভিটার মালিক। গ্রামের বাড়ি শুকরিয়া পাড়ায় নির্মাণাধীন রয়েছে আরেকটি বিল্ডিংয়ের কাজ। যার আনুমানিক বাজার মূল্য কোটি টাকার উপরে। এছাড়াও মহেশখালী পূবালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকে রয়েছে নামে বেনামে কয়েকটি ব্যাংক হিসাব।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে ইউনুসের প্রায় এক কোটি টাকারও বেশি সম্পদ রয়েছে। মাত্র কয়েক বছর আগেও যে চায়ের দোকানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। সেখানে আজ ইউনুস কোটিপতি। রাতারাতি বদলে যেতে থাকে তার জীবন মান। আর এর পেছনে হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে যুবলীগ নামটি। যুবলীগের নাম ব্যবহার করে ফায়দা নিয়ে নিশ্চিন্তে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা ব্যবসা। কারণ স্থানীয় যুবলীগের কর্মীরা তার ইয়াবার ব্যাবসায়ী নুর বক্সের পকেটে। ফলে যুবলীগের নাম ব্যবহার করলেও কেউ তাকে কিছুই বলার সাহস রাখেনা ৷
গত ৩০ জানুয়ারি উখিয়ার ইয়াবা সুন্দরী হিসেবে খ্যাত হাসিনা আক্তার নুর বক্স ও ইউনুস’র সাথে ইয়বা আদান প্রদানের সময় এলাকাবসী হাতেনাতে ধরলে ইয়াবার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ইয়াবা পাচারকারী হাসিনা আক্তারকে দিয়ে সুকৌশলে মহেশখালী থানায় ইউনুসের বিরুদ্ধে স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ দায়ের করে ইয়বার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর হাতেনাতে ইয়াবার বিষয় টি স্পষ্ট হওয়ার পর থেকে তারা গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানা যায় ৷৷৷