বিশেষ প্রতিনিধি
কক্সবাজারে এক কিশোরী অপহরণের ঘটনায় অভিযুক্ত দু’ভাইকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন কক্সবাজার নারী নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোসলেহ উদ্দিন। একই আদেশে তাদেরকে অর্ধলাখ টাকা অর্থদন্ডও করা হয়। দন্ডিত অর্থ পরিশোধ না করলে আরো ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হয়। রায় ঘোষণাকালে সাজাপ্রাপ্তরা কারাগারে উপস্থিত ছিলেন। মামলায় অভিযুক্ত ৫ জনকে বেখসুর খালাস দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন নারী নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট বদিউল আলম সিকদার।
দন্ডিতরা হলেন, মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটা সিকদার পাড়া এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলাম সওদাগরের ছেলে আবদুর রাজ্জাক (৪২) ও ডা. নুরুল আমিনের ছেলে আতা উল্লাহ ওরফে ননাইয়া (৪৩)। তারা দু’জন চাচাতো জেঠাত ভাই।
আদালত সূত্রে জানায়, ২০০২ সনে কক্সবাজার সদর উপজেলার পি.এম,খালী ইউনিয়নের ধাওনখালী এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষকের নাবালিকা স্কুল পড়ুয়া ১৪ বছর বয়সী মেয়েকে (সংগত কারনে নাম গোপন রাখা হল) দিন-দুপুরে জোরপূ্র্বক অপহরণ করে প্রাইভেট কার যোগে ঢাকায় নিয়ে যান অভিযুক্তরা। সেখানে কয়েকদিন রাখার পর পুনরায় কক্সবাজার শহরে নিয়ে এসে ইউনাইটেড হোটেলে রাখে। ভিকটিম শোর চিৎকার দিলে লোকজন জড়ো হয় এবং পুলিশ এসে ভিকটিমকে উদ্ধার করে। পরে ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে অভিযুক্ত মহেশখালীর গোরকঘাটা সিকদার পাড়ার আতা উল্লাহ ওরফে ননাইয়া, তার জেঠাত ভাই আবদুর রাজ্জাকসহ ৬-৭ জনকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট বদিউল আলম সিকদার জানান, তদন্ত শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য স্থানান্তরিত হয় (নারী-১৫৭/২০০২)। দীর্ঘ নানা কার্যক্রম ও সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে দুই আসামীর বিরুদ্ধে বাদীর আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের বিচারক দু’আসামীকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৩০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ প্রচার করেন। পাশাপাশি অর্ধলাখ টাকা অর্থদন্ডও করা হয়। অনাদায়ে দু’আসামীকে ৬মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড আদেশ দেন।
মামলায় অভিযুক্ত অপরাপর আসামীদের বেকসুর খালাস দেন বিচারক। রায় প্রচার কালে আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদেরকে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়। আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট শফিউল হক।
কক্সবাজার জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল -১ এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট বদিউল আলম সিকদার বলেন, আদালতের রায়ে ভিকটিম পরিবার ন্যায় বিচার পেয়েছে বলে মনে করছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে আরো একাধিক মামলা চলমান রয়েছে বলে জেনেছি। এসব অপরাধ তাদের পারিবারিক ঐতিহ্যের একটি অংশ বলে উল্লেখ করেছেন এলাকার লোকজন।