অনলাইন ডেস্ক:
কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প করার জন্য ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। এর সাথে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে ৪৫ টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদকৃত ভূমিহীন, ছিন্নমূল ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের জন্য ১০ একর জমিতে তৈরি করা হয় ঘর। এই উচ্ছেদকৃত পরিবারের তালিকায় নাম থেকেও অনেকে ঘর পাই নি বলে অভিযোগ ওঠেছে। ফলে ঘরবাড়ি হারিয়ে খুব মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বাধ্য হয়ে ঠাঁই নিচ্ছেন ভাড়া বাসায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাতারবাড়ীতে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয়রা তাদের জায়গা-সম্পদের পাশাপাশি মাথা গুজার ঠাঁই টা পর্যন্ত দিয়ে দিছেন। উচ্ছেদকৃতদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। আশা দেয়া হল, ঘর দেওয়া হবে, যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে এবং চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু বিশ্বাসের পর অনেক মানুষ কর্ম-ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। প্রতিনিয়ত উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আশ্বাস্ত করছেন। কিন্তু উচ্ছেদকৃতদের পূর্ণবাসনের জন্য ঘর তৈরি করা হলেও ঘর জুড়েনি ৬ টি পরিবারের। তালিকা নাম থেকে কেন ঘর পাইনি এই রহস্য উন্মোচন হয়নি আজও।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উচ্ছেদকৃত পরিবারদের জন্য ৫১ টি ঘর তৈরি করা হয়। অনেককে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে উচ্ছেদ তালিকায় নাম থেকে ঘর পাই নি ৬ টি পরিবার। তারা হলেন, আবদুল জব্বার, ইউনুস, নাছির উদ্দীন, বদর উদ্দিন, কায়ছার, মুফিজুর রহমান। কিন্তু বরাদ্দকৃত নতুন ৬ তৈরি ঘর গুলো এখনো খালি পড়ে আছে। উচ্ছেদকৃতদের ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হলেও ৬ টি পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না ঘর। কেন বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। এই রহস্য কেউ বলতে পারেন নি? অনেকের তালিকায় নাম না থাকার পরও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঘর পেয়েছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী আবদুল জব্বার বলেন, আমার জায়গাটি খতিয়ানকৃত জায়গা। সবাইকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হলেও আমারসহ ৬ পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয় নি। অথচ তৈরিকৃত ঘর গুলো এখনো খালি পড়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে শুকাচ্ছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি আমরা। আমি বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক। দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। সরকারকে আমি নিজের সব দিয়ে সহযোগিতা করেছি। অথচ আজ আমাকে পথে বসতে হচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিডেটের মাতারবাড়ী প্রকল্প কার্যালয় সূত্র জানায়, উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলোর জন্য ঘর তৈরি করা হয়েছে। তাদের সবাইকে জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কেউ ঘর পাইনি এমন তথ্য তাদের জানা নেই। কিন্তু কেউ প্রকল্পের কোন ক্ষতিপূরণ পেলে তাদের আর ঘর দেওয়া হবে না বলে জানান।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, পূর্ণবাসনে অনেকে প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ পেয়েও ঘরের বরাদ্দ পেয়েছেন। রোয়েদাদ (নোটিশ) না পেয়ে অনেকে ঘরে পেয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উচ্ছেদকৃত পরিবারের বদর উদ্দিন বলেন, আমাদের সব কিছু দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়ে ছিল। কিন্তু আমরা কিছু পাইনি। একটা চাকরিও পাই নি। কর্ম হারিয়ে আমরা খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। থাকতে হচ্ছে অন্যের বাসা ভাড়া নিয়ে। সরকার যদি আমাদের একটু নজর দেই তাহলে আমরা একটা মাথা গোজানোর ঠাঁই পাব।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, উচ্ছেদকৃত পরিবারের জন্য ঘর তৈরি করা হয়েছে। ৬ টি পরিবার ঘর পাইনি। অথচ পূর্ণবাসনে ৬ টি ঘর খালি পড়ে আছে। তাদের ঘর গুলো বুঝিয়ে দেওয়ার দেওয়ার জন্য আমি অনেকবার জানিয়েছি। কেন বুঝিয়ে দিচ্ছে না জানিনা। তাদের ঘর গুলো দ্রুত বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুরোধ জানাচ্ছি।
উচ্ছেদকৃত পরিবারের তালিকায় থাকা কায়সার বলেন, আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সাবেক জেলা প্রশাসক কামাল হোসেনের কাছে অনেকবার যোগাযোগ করেছি। ওনারা আশ্বাস্ত করে ছিলেন। কিন্তু কোন সুরাহা মেলে নি।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর দিচ্ছেন। অথচ সরকারি প্রকল্পে সহযোগিতা করতে গিয়ে নিজেরা নিঃস্ব হয়ে পড়ছি। অশ্রু জলে বলেন, খুব কষ্টে আছি। দুঃচিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না। একটা ঘর মরার আগে পেলে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারব।
এই বিষয়ে কোল পাওয়ারের নির্বাহী পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ শেয়ার বিজকে জানান, জেলা প্রশাসকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী উচ্ছেদকৃত সবাইকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ না পাওয়ার সুযোগ নেই।
পূর্ণবাসনে এখনো ৬ টি ঘর খালি পড়ে আছে। ঘর না পাওয়া ৬ টি পরিবারকে ঘর গুলো দেওয়া যাই কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালি থাকা ঘর ৬ টি অন্য প্রকল্পের। উচ্ছেদকৃতদের জন্য নই। উক্ত প্রকল্প এখন স্থগিত আছে, তাই ঘর গুলো খালি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ আপন কন্ঠকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।