1. dwipnews24.info@gmail.com : Dwip News 24 :
  2. editor@dwipnews24.com : Newsroom :
মেজর (অব) সিনহার জানাজায় সামরিক বাহিনীর কবরস্থানে তাঁর মা নাসিমার বক্তব্য | দ্বীপ নিউজ
April 19, 2024, 1:19 pm
শিরোনাম :
মাতারবাড়ীতে পূর্ব শত্রুতার জেরে রাতের আধাঁরে হামলা ও লুটপাট, আহত একাধিক মাতারবাড়িতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, পরিবারের দাবী হত্যা মহাকাশ গবেষণায় মহেশখালীর ১১ শিশু-কিশোরের সফলতা মাতারবাড়ি প্রকল্পের ভিতরে সাংবাদিক রকিয়তকে আটকে রেখে মারধর ও হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন মাতারবাড়ীতে সাংবাদিকদের হাত-পা কেটে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান রাজাকে বিভিন্ন মহলে অভিনন্দন কক্সবাজার জেলা থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে জয়িতা সম্মাননা পেলেন শাহরিন জাহান মহেশখালীতে ভুমিহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকার সুরক্ষার তাগিদে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত কক্সবাজার-২ থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের মনোনয়ন পাচ্ছেন সাংবাদিক নেতা মাওলানা ইউনুস মহেশখালীতে তুচ্ছ ঘটনায় নিহত ১, নগদ টাকাসহ ৩০ লক্ষ টাকার মালামাল লুটের অভিযোগ 

মেজর (অব) সিনহার জানাজায় সামরিক বাহিনীর কবরস্থানে তাঁর মা নাসিমার বক্তব্য

  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, আগস্ট ৪, ২০২০
  • 353 ভিউ

অনলাইন ডেস্ক:

“আমার ছেলে বাস্তবের একজন নায়ক ছিল, সে সাহসের সাথে মৃত্যুকে বরণ করেছে, সে কোন কাপুরুষ ছিলো না, সে একজন জাতীয় বীর ছিল। সে ছিল একজন সত্যিকারের প্রেরণাদাতা, আমাদের সকল আত্মীয়, সব বন্ধু তাঁর কাছ থেকে জীবনের উৎসাহ পেতো। সে সবসময়ই হাস্যজ্জল এক চমৎকার মানুষ ছিল যে সবসময়ই মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে এবং অন্যদের সুখী করতে চেষ্টা চালাতো। অপরের সুখের জন্য জীবন উৎসর্গ করাই ছিল তাঁর অন্যতম ব্রত।

আমাকে বিন্দুমাত্র জিজ্ঞাসা না করেও আমার সকল আরামের দিকে তাঁর পুঙ্খানুপুঙ্খ নজর ছিলো। চাকরির কারণে তাঁর পোস্টিং যেখানেই হোক না কেন আমি যাতে ভালো থাকি, আরামে থাকি সে নিয়ে তাঁর চেষ্টার অন্ত ছিল না। বাড়ির প্রতিটা কাজে আমাকে সাহায্য করতো। সবকাজ সবসময়ই নিজে নিজেই করে আমাকে সবসময় চমকে দেওয়ার কাজটা সে খুব ভালো পারতো। আমাদের বাড়ীর প্রতিটি কোণা, প্রতিটি দেয়াল সে নিজের হাতে সাজিয়েছিল।

তাঁর বাবার মৃত্যুর সময় আমাদের বাড়িটা দুইতলা ছিল। কিন্তু যখন সে এসএসএফে পোস্টিং পেল (তাঁর ১৬ বছরের সামরিক জীবনে যে একটি মাত্র সময়েই সে ঢাকায় পোস্টিং পেয়েছিল), তখনই যে হাউজ বিল্ডিং থেকে ঋণ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে আমাদের বাড়িটা চারতলা করে। এই নির্মাণ কাজের তদারকি করার সে অধিকাংশ সময়ই সে রাতে আসতো যেহেতু এসএসএফের দায়িত্বে ব্যস্ততা অত্যন্ত বেশি থাকায় এছাড়া সময় পেত না।

আমার ছেলেকে তাঁর কোন ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমি আটকে রাখি নাই, কোন সময়েই না। যা যা সে করতে চেয়েছে আমি স্বাধীনতা দিয়েছি। অবশ্য সে আমাকে সবসময়ই বুঝিয়ে ফেলতে সক্ষম হতো কোন না কোনভাবে। আমাকে না বুঝিয়ে সে একটা কাজও করেনি। সে সবসময়ই আমার অনুমতি নিয়ে নিত সেই কাজগুলোর জন্য যেগুলো তাকে সুখী করতে পারে। যাতে তাঁর ভালো লাগে, সেই কাজগুলোতে আমার সবসময়ই সায় ছিল।

সে ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দেশকে যে নিজের চেয়ে বেশী ভালোবাসতো। আমার ছেলে ছিল দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সে সমুদ্র ভালোবাসতো, সে সৈকতে বই পড়তে পড়তে সময় কাটাতে চাইতো। শৈশব থেকেই সে অ্যাডভেঞ্চারের ভক্ত ছিল।

সারা বিশ্ব ভ্রমণের এক প্রগাঢ় সাধ ছিলো তাঁর, যে জন্য বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী থেকে সে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছিল। আমি তাকে নিষেধ করি নাই। তাঁর হিমালয়ে যাবার স্বপ্ন ছিল, ছেলেটা হাইকিং পছন্দ করতো, জাপানে একটা সাইকেল ট্যুরে যেতে চেয়েছিলো। চাকুরি থেকে অবসরের পরপরই সে তাঁর এই স্বপ্নগুলো ছোঁয়ার জন্য প্রস্তত হচ্ছিল।

এর মাঝে করোনা মহামারি চলে এলো। দেশ ব্যাপী লকডাউন শুরু হবার কদিন পরে সে জানালো যে তাকে নিয়মিতই বাহিরে যাতায়াত করতে হয়, এবং আমি একজন বয়স্ক মানুষ, তাই তাঁর এই চলাফেরা আমার জন্য বেশী ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এরপর সে বলল যে রাজশাহী যাবে কিছুদিনের জন্য, সেখানে তাঁর এক বন্ধুর মা
(যিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন) এক বিশাল লাইব্রেরী করেছেন। ছোট থেকেই সে প্রচুর বই পড়তো। তাই তাকে আমি সেখানে যেতে দিলাম, বললাম প্রচুর পড়াশোনা করতে। সে রাজশাহীতে প্রায় চার মাস ছিল এবং আস্তে আস্তে নিজেকে বিশ্ব ভ্রমণের জন্য প্রস্তত করছিল।

ছেলেটার তীব্র ভ্রমণের নেশা ছিল। যখন সে জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে ছিল, ছুটিতে বাংলাদেশে আসতো না। তার বদলে দুই মাসের ছুটিতে ইউরোপ যেয়ে গাড়ী করে হাজার হাজার মাইল ড্রাইভ করে নিজে নিজে ঘুরেছিল। এটা আমার খুব ভালো লেগেছিল কারণ ছেলেটা অন্তত নিজের একটা স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিল। আমার পূর্ণ সমর্থন ছিল এই সিদ্ধান্তের প্রতি।

চাকরি থেকে অবসর নেবার পর প্রতি রাতে সে আমার মশারি টাঙ্গিয়ে দিত, আমার সকল ঔষধপত্র নিজে নিজেই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতো, যাতে আমার বুঝতে বিন্দুমাত্র সমস্যা না হয়। যখনই বাড়ির বাহিরে যেত, সবসময়ই নিজের চাবি নিয়ে যেত, যাতে আমাকে বিরক্ত না করতে হয় দরজা খোলার জন্য।

রাজশাহী থেকে ফিরে মাত্র ক’দিন আমার সাথে ছিল। এবং তারপর কক্সবাজারে এক মাসের জন্য থেকে একটা তথ্যচিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা জানালো। আমি সম্মতি দিয়েছিলাম। সে বিয়ে করেনি, আর আমিও তাঁর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চাইনি। ২৬ জুলাই ছিল ওর জন্মদিন। অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে সে যে রিসোর্টে ছিল সেখানে এক বাক্স চকলেট পাঠিয়েছিলাম। কোরবানির ঈদের সময় ছেলেটা আমাকে কক্সবাজারে যেয়ে ওর সাথে ঈদ করতে বলছিল, কারণ তথ্যচিত্রের শুটিঙয়ে নাকি আরও কয়েকদিন সময়ের দরকার ছিলো। অসুস্থতার কারণে আমার যাওয়া হয়ে উঠেনি।

৩১ জুলাই রাত ১১টায় আমি ছেলেকে ফোন দিয়েছিলাম, কিন্তু ফোন কেউ ধরে নাই। অবশেষে পুলিশ আমাকে ফোন করে আদনানের (মেজর সিনহার ডাকনাম) মৃত্যুসংবাদ দেয়।

আমার ছেলে একজন শহীদ। একজন বীরের রক্ত এবং মায়ের অশ্রু বৃথা যেতে পারে না। আশা করি পরম করুণাময় তাকে জান্নাতে আশ্রয় দিবে। সংগৃহীত..

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই বিভাগের আরো খবর
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত © 2022 dwipnews24.net
Desing & Developed BY ThemeNeed.com
error: Content is protected !!