চল্লিশ বসন্ত পেরোনো জনৈক কলেজ অধ্যাপিকা আর কলেজপড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার খবরটি বেশ কয়েকদিন থেকে সোশ্যাল মিডিয়াসহ প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় প্রতিটি চা-দোকানের আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদ্যোপান্ত জেনে কেউ কেউ তাদের শুভকামনা জানাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ ছুঁড়ে দিচ্ছেন তীর্যক মন্তব্য; করছেন নগ্ন সমালোচনা আর অযাচিত ট্রলবাজির মতো অনধিকারচর্চা।
নারী-পুরুষের অবৈধ যৌনসম্পর্ক স্থাপন, লিভ-টুগেদার, ঠুনকো অজুহাতে বিবাহ-বিচ্ছেদ ও এসব তালাকপ্রাপ্ত নারীর পরবর্তী দুঃসহনীয় জীবনযাপন, যৌতুক-প্রথা, বিবাহে তালাকপ্রাপ্ত নারীদের প্রতি পুরুষের অনাগ্রহ এবং তাদের প্রতি রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের তীর্যক দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমান বাংলাদেশের সমাজের এক করুণ ও রূঢ় বাস্তবতা।
উপর্যুক্ত সমস্যার কারণে একদিকে নারীরা যেমন সমাজে প্রতিনিয়ত অবহেলিত, নির্যাতিত ও অবমূল্যায়িত হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে ব্যভিচারের মতো জাতিবিধ্বংসী এক ঘৃণ্য অপরাধ।
এসবের সাথে যোগ হয় এদেশে বহুদিন থেকে চলে-আসা সো-কল্ড ট্র্যাডিশন। কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমাজের অধিকাংশ লোক ও রাষ্ট্রের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে— কিশোর-কিশোরীর বিবাহবহির্ভূত অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে যতটুকু না অপরাধ, তার চেয়ে বড়ো অপরাধ হলো অভিভাবকদের সম্মতি সত্ত্বেও তাদের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজে পরকীয়া যতটুকু না ঘৃণ্য, তারচেয়ে অধিক ঘৃণ্য একাধিক বিয়ে। পুরুষেরা নিজের চেয়ে বেশি বয়সী মহিলাদের সাথে পরকীয়া বা অবৈধ মেলামেশায় সমস্যা না হলেও, বড়ো অমর্যাদাকর ও অশুচি মনে করা হয় তার চেয়ে বেশি বয়সী কোনো নারীকে বিয়ে করা। (যদিও বয়সের ব্যবধান শরিয়াহ কিংবা অন্য যেকোনো দৃষ্টিতে বিবাহের মৌলিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নাথিং ম্যাটার)।
বিপত্নীক কিংবা একাধিক সন্তান রেখে মারা-যাওয়া স্ত্রীর স্বামীদের ২য় বিবাহ কিংবা বার্ধক্যে বিয়ে করা এই সমাজ-রাষ্ট্রে যতটুকু না সহজ, তার চেয়ে বেশি সহজ অসংকোচ-চিত্তে ব্রোথলহাউজে গমন বা অবৈধ লিভ-টুগেদারে জড়িয়ে পড়া।
এই তিক্ত, করুণ ও কঠিন বাস্তবতায় স্রোতের বিপরীতে চল্লিশোর্ধ্ব এই কলেজ অধ্যাপিকা ও কলেজপড়ুয়া তরুণ শিক্ষার্থীর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এবং পরবর্তীতে মিডিয়ায় প্রকাশ্যে ঘোষণাদান চাট্টিখানি কথা নয়; এটি দুজনের এক চরম সাহসিকতার পরিচয়।
স্রোতের বিপরীতে সাহসী এই পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তাদের দুজনকে জানাই আন্তরিক স্যালুট। তাদের প্রতি জানাই অজস্র শুভকামনা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাদের এই বিবাহে বারাকা দান করুন। তাদের দাম্পত্যজীবনকে সুখময় করুন।
আশা করি, এই কাপল “মন্তব্যে গন্তব্য না ঠেকা”র যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তাতে তারা অটল থাকবেন। আর যারা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা লোকলজ্জার ভয়ে বিবাহ করতে না পেরে অবৈধ পরকীয়া ও লিভ-টুগেদারের মতো জঘন্য অপরাধে লিপ্ত, তাদের জন্য এই কাপল একটি আদর্শ জুটি হবেন এবং সর্বোপরি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র স্পর্শকাতর এসব ব্যাপারে আরো সদয় হবেন; বাস্তববাদী হবেন এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভংঙ্গি লালন করবেন।
মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
প্রভাষক, লোহাগাড়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা।