পাঠক কলাম:
আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরুদের সাথে বাজারে দেখা হবে বলে বাজারে তেমন যেতাম না! আমরা যখন আমাদের শিক্ষকদের বাজারে দেখতে পেতাম চোরের মত পালিয়ে যেতাম! হঠাৎ যখন দর্শন হয়ে যেত কাচুমাচু হয়ে যেতাম,মাথার চুল ধরে ইতস্ততবোধ করে সালাম দিয়ে তড়িঘড়ি করে চলে আসার চেষ্টা করতাম।আমাদের অভিভাবকরা শিক্ষকদের বলতেন পিঠের চামড়া তুলে হাড্ডিগুলো আমাদের দিবেন।শাস্তির ক্ষেত্রে নো কম্প্রোমাইজ!আসলে কি আমাদের শিক্ষকরা মেরে শরীরের চামড়া তুলে ফেলতেন!
সেই সময় এখন আর নেই,সেই শিক্ষকরা আছেন তবে অবহেলিত।
নিয়মিত চুল ও নখ কাটা সহ পরিপাটি পোশাক পরিধান করে বিদ্যালয়ে আসা ছাত্রদের নৈতিক দায়িত্ব। বর্তমানে এমন অবস্থা হয়েগেছে এগুলো কাটার জন্য শিক্ষকদের বলতে হয়।আর যদি বলে পেলেন সেই শিক্ষকরা হেনস্তার শিকার হয়!আমরা যথেষ্ট আধুনিক এবং সভ্য তাই শালীনতা বিবর্জিত স্টাইলিশ চুল ও নখ রাখলে কার কি আসে যায়!আপনি শিক্ষক পাঠদান করবেন,রোল কল করবেন,পরিক্ষা নিবেন,খাতায় নাম্বার দিবেন এসব আপনার কাজ!ছাত্রদের ব্যক্তিগত স্টাইলে হস্তক্ষেপ করবেন কেন!
আসলে কি শিক্ষকরা ছাত্রদের শত্রু!নাকি আদব-কায়দা, ভদ্রতা -নম্রতা ও শিষ্টাচার শেখাতে দু”এক বাক্যে কটু কথা সাথে দু “একটা বেত্রাঘাত করা শত্রুতার পর্য়াযে পড়ে!আহ!এখন তো পাঠদানে বেত রাখা যায় না।
কাজী কাদের নেওয়াজের কবিতা “শিক্ষকের মর্যাদা” সম্পর্কে বাদশাহ আলমগীর যথার্থ বলেছেন, তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন তাঁর সন্তান নিজের হাতে শিক্ষাগুরুর পা ধুয়ে দেবেন। তবেই না তাঁর সন্তান নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও দেশ প্রেম নিয়ে দেশের একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। কারণ তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন,যে ছাত্র তার শিক্ষককে যথাযথ মর্যাদা দিতে জানে না,শিক্ষকের সেবা করতে জানে না,সে কখনো পরিবার, সমাজ ও দেশের উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।
কিন্তু বর্তমানে তার উল্টোটা।এমনও ছাত্র আছে শিক্ষক দেখলে সিগারেটের সুখটানের ধোয়া বেড়ে যায়।শার্টের কলার ফুলিয়ে বখাটের মত রাস্তায় দাড়িয়ে থাকে শিক্ষক নিজেই পাশ কেটে চলে যায়।মহিলা শিক্ষিকা হলে মন্তব্যের শেষ নাই। ম্যাডামকে দেখতে এখনো কুমারীর মত লাগে।কারো স্বপ্নের রাণী হয়।ক্লাসে হা করে চেয়ে থাকে ইত্যাদি।যার ফলে আজ শিক্ষকদের মর্যাদা নাই।
ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক হতে হবে পাত্র ও পানির মতো।পাত্র ছাড়া যেমন পানি সংরক্ষণ সম্ভব নয়,তেমনি শিক্ষক-ছাত্র সুসম্পর্ক ছাড়া জ্ঞানার্জন বিতরণও অসম্ভব। একজন শিক্ষকই শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জনের পেছনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জোগায়, স্বপ্ন দেখায়।
জয় হোক আদর্শবান শিক্ষক সমাজের।
রিয়াজ মাহমুদ
ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ।