অনলাইন ডেস্ক:
দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘর ও উপসনালয়ে হামলার ঘটনায় এপর্যন্ত ১১ জেলায় ৪৯ টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে অন্তত ১৩ হাজার জনকে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনশ’র বেশি জনকে।
রংপুরের পীরগঞ্জের মাঝিপাড়ায় হিন্দু পল্লীতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাত ৫ শতাধিক আসামি করে ২টি মামলা করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটক করা হয়েছে ৪৫ জনকে।
গতকাল রাত ৯ টার দিকে পীরগঞ্জের মাঝিপাড়ার হিন্দু পল্লীতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। সে সময়, ২০টি বেশি ঘর-বাড়িসহ বেশ কিছু মালামাল পুড়িয়ে দেয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটের এক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এসময় দুর্বৃত্তদের রুখতে ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে পুলিশ। পরে রাত ১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। উদ্ধুত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে সেখানে রাতভর উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ। বাড়িতে আগুনে ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্থ, সে সব পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসক।
এদিকে গাজীপুরের কাশিমপুরে পূজা মণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামি করে ৩টি মামলা হয়। এসব মামলায় গ্রেপ্তার ২০ জনের মধ্যে ১৮ জনকে দু’দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
নোয়াখালীতে ১৮ মামলায় ৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ৯০ জন। কুমিল্লায় এ পর্যন্ত দায়ের করা ৮ মামলায় আসামির সংখ্যা অন্তত ৮শ জন। গ্রেপ্তার হয়েছে ৪৩ জন। চট্টগ্রামে ৮৪ জনের নাম উল্লেখ করে ৫শ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হয়েছে ৮৪ জন।
শুক্রবার ঢাকার কাকরাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে রমনা ও পল্টন থানায়। এসব মামলায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ৪০০০ জনকে।
শুক্রবার জুমার নামারে পর কয়েকশো মানুষ বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল বের করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চড়িয়ে পড়ে। পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার সেল ও শটগানের গুলি ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এসব মামলায় সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বুধবারের সহিংসতার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় দুই হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। হাজীগঞ্জ থানায় হামলায় ও পুলিশ আহতের ঘটনায় দু’টি মামলা হয়েছে। এছাড়া দু’টি মন্দিরের কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে দু’টি মামলা করেছেন।
শুক্রবার বিকালে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুন্ধর ইউনিয়নে কাদিম মাইজহাটি গ্রামের একটি মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর হয়। সেই ঘটনায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, মূর্তি ভাঙচুর, চুরি ইত্যাদি অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় নয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে ৩০/৩৫ জন। এদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফেনীতে সংঘর্ষের ঘটনায় দু’টি মামলা হচ্ছে। এসব মামলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা দান, ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রথম মামলায় অজ্ঞাতনামা আড়াইশো ব্যক্তিকে, দ্বিতীয় মামলায় ১৫০ ব্যক্তিকে আসামী করা হচ্ছে। তবে এখনো কোন গ্রেপ্তার হয়নি।
এছাড়া, সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সিলেট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, কুড়িগ্রাম বেশ কয়েকটি মামলায় আটক হয়েছে আরো কয়েকজন।