এ.কে রিফাত: (মহেশখালী)
বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীর। এই দ্বীপের পাহাড় গুলো বোবা বলে নির্বিচারে রাতের আঁধারে কখনো দিনে দুপুরে মহেশখালী হোয়ানক ইউনিয়ন সাতঘরিয়া পাড়ায়, পাহাড় কাটার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।পাহাড়ের হয়ে সুখ দুঃখের কথা বলার জন্য বন বিভাগ থাকলেও মহেশখালী বনবিট রেঞ্জার খান জুলফিকার আলী মুখে কুলুপ এঁটে নির্বিকার বসে আছে।
মহেশখালীতে রাতের আধারে পুলিশের অভিযানে পাহাড় কাটার সময় পাঁচটি ডাম্পার গাড়ি ও পাহাড় কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম আটক করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করেন।
১৪ অক্টোবর (শুক্রবার) রাত ৯টায় মহেশখালী থানা পুলিশ উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের বারঘর পাড়ার আবদুল আলীর ঘোনায় এ অভিযান চালায়।
আসামীরা হলেন, ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের দক্ষিনকুল গ্রামেন মৃত শামসুল ইসলামের পুত্র জাহেদ সিকদার (৩০), মহেশখালী পৌরসভার পালপাড়া গ্রামের মৃত সুভাষ পালের পুত্র স্বপন পাল (৪৫), ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের নলবিলা গ্রামের আবুল হাশেম প্রকাশ সুইননার পুত্র সরোয়ার (৩৮) এবং পানিরছড়া ইউনিয়নের পানিরছড়া জৈয়ারকাটা গ্রামের মৃত রশিদ আলীর পুত্র সেলিম প্রকাশ সল্লু (৩০)।
এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাহাড় কাটার অভিযোগে পুলিশের করা মামলায় ওই চারজন আসামী চিহ্নিত পাহাড় ও বন কাটা চক্রের একেকজন দলনেতা। তাদের হাত ধরেই মুলত মহেশখালীর পাহাড় নির্বিচারে ধ্বংস হচ্ছে। প্রশাসন বিভিন্ন সময় ভাম্যমান আদালতে পাহাড় ও বন খেকোদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে শাস্তি দেয়ার পাশাপাশি পাহাড় কাটার সরঞ্জাম জব্দ করলেও কিছুদিনের মধ্যে তা ছাড় পেয়ে এসব পূনরায় পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহৃত হয়।
মহেশখালী থানা সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হোয়ানকের পাহাড়ী এলাকায় ওসি প্রনব চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি টীম অভিযান চালায়। পুলিশ গোরকঘাটা জনতাবাজার প্রধান সড়ক থেকে পূর্ব পাশে প্রায় এক কিলোমিটার পাহাড়ের ভিতরে পৌঁছালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ৫টি ডাম্পার গাড়ি ও পাহাড় কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম রেখে পালিয়ে যায় পাহাড় খেকোরা। এসময় গাড়ি ও সরঞ্জাম গুলো জব্দ করে পুলিশ।
ওসি প্রনব চৌধুরীর নেতৃত্বে পরিচালিত দীর্ঘ ৬ ঘন্টা ব্যাপি পরিচালিত এই অভিযানে সাথে ছিলেন, সাব-ইনস্পেক্টর আবু বক্কর,সাব-ইনস্পেক্টর বাপ্পি সরদার, সাব-ইনস্পেক্টর সজল কান্তি নাথ, এএসআই জসিম, এএসআই ইলিয়াস সহ পুলিশের একটি বিশেষ টীম।
এদিকে এলাকাবাসীরা জানান- দীর্ঘদিন ধরে বনবিভাগের লোকদের সাথে সমন্বয় করে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে পাহাড় খেকো চক্রের সদস্যরা। বিগত কয়েকদিনের মধ্যে চক্রটি প্রায় ৫০ ফুটের একটি পাহাড় কেটে বন উজাড় করেছে। চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করতে পারেনি। চোখের সামনে পাহাড় ধ্বংসের চিত্র দেখে আসছে তারা।
পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘মহেশখালীতে দীর্ঘদিন ধরে ভয়াবহ আকারে পাহাড় কাটা চলে আসছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন পাহাড় কাটা রোধে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তবে দীর্ঘদিন পর হলেও পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। এধরণের অভিযান নিয়মিত চালানো হলে পাহাড় কাটার হার অবশ্যই কমে আসবে।’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমরা মহেশখালীবাসীর সমন্বয়ক মুহাম্মদ এনামুল করিম বলেন- “পাহাড়ের জন্যই বিখ্যাত মহেশখালী দ্বীপ। দ্বীপের সৌন্দর্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে এ দ্বীপের পাহাড় ও বন রক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কিন্তু এখানে উল্টো পাহাড় ও বন কাটার মহোৎসব চলছে। আর এসব করছে জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় সংঘবদ্ধ একটি গ্রুপ। পাহাড় ও বন রক্ষায় প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।”
উক্ত বিষয়ে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রনব চৌধুরী জানিয়েছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পাহাড় ও বনায়ন রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যারা এসব ধ্বংসের কাজে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ১৫ এবং বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ১৫ ধারায় জড়িত ৪ জন ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
ঘটনা সম্পর্কে মমহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইয়াছিন জানিয়েছেন, মমহেশখালীর পাহাড় ও বন রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিবেশ রক্ষা হলে সবাই নিরাপদ থাকবে। এসময় তিনি পাহাড় ও বন খেকোদের বিরুদ্ধে তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান