নিজস্ব প্রতিবেদক:
অস্তিত্ব সংকট ও বিলুপ্তির পথে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী, কালারমারছড়া, হোয়ানক ও ধলঘাট ইউনিয়ের পাশ ঘেঁষে যাওয়া একমাত্র নদী “কোহেলিয়া”। এক যুগ আগেও যেখানে কোহেলিয়া নদীটির উপর নির্ভর করে সংসার চলতো এই চার ইউনিয়নের কয়েক হাজার জেলে পরিবারের। সেখানে নদী ভরাট করে প্রকল্পের স্থাপনা নির্মাণ, রাস্তা তৈরি ও নানান কারণে নদী দখল হওয়ার কারণে বিলুপ্তির পথে থাকা, পূর্বের জৌলুশপূর্ণ নদীটি হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে রয়েছে কয়েক হাজার জেলে।
২০১৫ সালের দীকে মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প, পল্লী বিদ্যুৎ এর সাব-স্টেশন ও সম্প্রতি মীর আকতার কোম্পানির সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে ভরাট হয়েছে নদীর অধিকাংশ পাড়, এছাড়া প্রভাবশালীরা নদী ভরাট করে ঘের তৈরি করার প্রতিযোগীতায় নেমেছে বেশ জোরেশোরে।
কোহেলিয়া নদীতে মহেশখালীর চার ইউনিয়নের কয়েক হাজার জেলের পাশাপাশি, পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া সহ আরো বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন হতে জেলেরা মাছ শিকারে আসে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। নদী ভরাট করে উন্নয়ন, প্রকল্পের বর্জ্য এসে ভরাট সহ নদী দখল করে ঘের তৈরি করার ফলে মাছ শিকার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে মৃতপ্রায় নদীটিতে। যে কারণে অনেক জেলে পেশা পরিবর্তন করার দৌড়ে রয়েছে বলেও জানা যায়।
মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীর ৩নং ওয়ার্ডের আবু সৈয়দ বহদ্দার, বাচ্চু, ছাবের আহমদ, বাইশ্যা সহ কালারমার ছড়া ইউনিয়নের ১ ও ২ নং ওয়ার্ড, এবং হোয়ানক ও ধলঘাট ইউনিয়নের অসংখ্য জেলে পেশা পরিবর্তন করেছে বলেও জানা গেছে।
রফিক উদ্দিন মানিক নামের এক সমাজসেবক জানায়, মাতারবাড়ী ৩ নং ওয়ার্ডের উত্তর ও দক্ষিণ রাজঘাটের প্রায় ৫ শতাধিক জেলে কোহেলিয়া নদীর উপর নির্ভর করে পরিবারের ভরনপোষণ করেন। কিন্তু প্রায় মৃত এই নদীরতে মাছ শিকার করতে না পারায় অসহায় হয়েছে পড়েছে অসংখ্য জেলে।
দেলোয়ার হোছাইন নামের এক যুবক জানায়, এক যুগ পূর্বে আমার পিতার বড় বড় দুইটা মাছ শিকারের জাল ছিলো। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায়, নানান কারণে নদী ভরাট হওয়ার ফলে জাল গুলো নদীতে নামানোর অবস্থা নেই। এখন আমাদের জাল গুলো বিক্রি করে দিয়ে আমরা অন্য পেশায় স্থানান্তরিত হয়ে গেছি।
এ ব্যাপারে কালারমারছড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওসমান গণি জানান, কোহেলিয়া নদীতে মাছ শিকারের অবস্থা নেই। আমার ওয়ার্ডে ৩০ জনের মতো নিবন্ধিত জেলে রয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকে প্রকৃত জেলে নয় কিন্তু সুবিধাভোগ করে যাচ্ছে। অথচ প্রকৃত অর্ধ শতাধিক জেলেরা নিবন্ধন করতে পারেনি, যারকারণে তাঁরা বেশ দূরাবস্থায় রয়েছে এখনো।
খবর নিয়ে আরো জানা যায় মাতারবাড়ীর ৩ নং ওয়ার্ডে ২৮৬ জনের মতো জেলে নিবন্ধিত হলেও আরো প্রায় দুই শতাধিক জেলে অনিবন্ধিত হওয়ায় অনেক সুযোগসুবিধা হতে বঞ্চিত রয়েছে। একই চিত্র কালারমারছড়া, হোয়ানক ও ধলঘাটা ইউনিয়নেরও।
এ ব্যাপারে ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, আমাদের ইউনিয়নেও ৫ শতাধিক জেলে রয়েছে যারা কোহেলিয়া নদীতে চাষবাস করে। কিন্তু কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের পলিমাটির কারণে নদী এখন বিলুপ্তের পথে। এবিষয়ে আমি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের মিডি মিটিং ও জেলা প্রশাসক বরাবর জানিয়ে রেখেছি যাতে, জেলেদের এককালীন একটি অনুদান দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করার সুযোগ পায়। তাছাড়া, গভীর সমুদ্রবন্দর হলে ও কয়লাবিদ্যুৎ নির্মাণ শেষ হলে জেলে ও তাঁদের ছেলেসন্তানের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র মহেশখালী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কোহেলিয়া নদী রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব আবু বক্কর ছিদ্দিক জানায়, নদী রক্ষাও উন্নয়নের একটি অংশ। মহেশখালীর কয়েক লাখ মানুষ কোন না কোনভাবে কোহেলিয়া নদীর উপর নির্ভরশীল। কোহেলিয়া নদীর রক্ষার জন্য বাপার পক্ষ থেকে ঢাকা থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলায় নানান কর্মসূচি করেছি। আমাদের একটাই দাবি পূর্বের কোহেলিয়া ফেরত চাই। কোহেলিয়া নদী রক্ষা না হলে কয়েক হাজার জেলেদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে এবং পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।