নিজস্ব প্রতিবেদক:
মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে দীর্ঘদিন ধরে চলা জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দু’পক্ষের কয়েক দফা সংঘর্ষ পরবর্তী, বাড়ী ঘেরাও করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নুরুল কবির (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে।
শুক্রবার (৩০শে ডিসেম্বর) মাতারবাড়ীর স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ড পূর্ব মাইজপাড়া এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে। নিহত নুরুল কবির (৫৫) স্থানীয় মৃত জেবর মুল্লুকের পুত্র।
এলাকাবাসীরা জানান, নিহত নুরুল কবির (৫৫) নিজের পৈতৃক ভিটা হতে স্থানান্তরিত হয়ে জমিক্রয় করে মাতারবাড়ী পাবলিক স্কুলের পশ্চিমে বসবাস শুরু করেন। পরে স্থানীয় বশির আহমদ সহ তাঁর ভাইগণদের কাছ থেকে জমিক্রয় করেন, যেখানে ভিটা সহ পুকুরেও রয়েছে ক্রয়কৃত জমির অংশ। পাবলিক স্কুলের পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে বসবাসরত স্থানীয় বশির আহমদের স্বজনদের পরিবার গুলো পাড় দখল করে ঘরের সীমানা তৈরি করতে গেলে নুরুল কবির বাঁধা দেওয়ায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয় নুরুল কবির গং সহ স্থানীয় বশির আহমদ গং’রা। শুক্রবার বিকালের সে সংঘর্ষে নুরুল কবির গংদের কোপে হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বশির আহমদের পুত্র আয়ুব আলী(২৩) এর।
কয়েকঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পর দু’পক্ষের সে সংঘাত তৈরি হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। সেদিন রাত আনুমানিক ১০ টার দীকে স্থানীয় বশির আহমদের পুত্র ও তাঁর স্বজনরা আয়ুব আলী (২৩) এর হাত বিচ্ছিন্ন করার পাল্টা জবাব দিতে নুরুল কবিরের বসতভিটায় প্রবেশ করে ঘর ঘেরাও করে। দরজা – জানালা ভেঙ্গে ঘরে ডুকে নুরুল কবির (৫৫) ও তাঁর পুত্র নুরুল আবছারকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। ঘটনাস্থলে নুরুল কবির মৃত্যুর কুলে ঢলে পড়েন এবং তাঁর পুত্র আবছারকে উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে নিহত নুরুল কবিরের সহোদর মোহাম্মদ কুদ্দুছ জানায়, আমার ভাই কবিরের ঘরের চারপাশের জানালা ও দরজা যে পরিমাণ ভাংচুর করা হয়েছে তাতে বুঝা যাচ্ছে অর্ধ শতাধিক লোক এসেছিল আমার ভাইকে মারার জন্য। বসতভিটায় প্রতিপক্ষের উপস্থিতি ঠেঁর পেয়ে, আত্মরক্ষার্থে ঘরে আবদ্ধ থাকা আমার ভাই নুরুল কবির ও ভাইপো নুরুল আবছার সরকারি জরুরি সহায়তা নাম্বার ৯৯৯ -এ কল করে পুলিশের সহায়তা চান। নিজের পিতাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও আহত হয়। জমিসংক্রান্ত বিরোধটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিচারাধীন ছিল বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে মাতারবাড়ী ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সরোয়ার কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাত ১১ টায় ঘটনাটি শুনার পর আমি ঘটনাস্থলে যাই। এবং উপস্থিত মানুষজনের কাছে জানার চেষ্টা করি ঘটনাবলি। জমিসংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে দুপক্ষের বিচার তাঁর কাছে বিচারাধীন ছিল কিনা তা জানতে চাইলে, তিনি বলেন – আমার কাছে এ বিষয়ে কোন বিচার ছিলনা, এটি সম্ভবত পুলিশ ক্যাম্পে বিচারাধীন ছিল।
এদিকে খুনের এই ঘটনা পরবর্তী একইদিন রাত আনুমানিক ১২ টার দীকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মহেশখালী – কুতুবদিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু তাহের ফারুকী ও মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রণব চৌধুরী সহ একটি টিম। এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিহতের স্বজনদের যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে আশ্বস্ত করেন তাঁরা।
মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আবু হায়দার ন্যাক্কারজনক ঘটনাটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে, মাতারবাড়ীতে এমন ঘটনা পরবর্তীতে পুনরাবৃত্তি না হতে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন।
আত্মরক্ষার্থে ঘরে আবদ্ধ থাকা নুরুল কবির (৫৫) কে বাঁচাতে তার ছেলে আবছার জরুরি সহায়তা নাম্বার ৯৯৯ – এ কল করার পর, তাঁদের উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে মাতারবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির একটি দল উপস্থিত হয় বলে জানা গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগেই প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান নুরুল কবির (৫৫) এবং গুরুতর আহত হন তার ছেলে নুরুল আবছার। পরে পুলিশ নিহত নুরুল কবিরের লাশ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করেন।
এ বিষয়ে জানতে মহেশখালী থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক মীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান – থানায় এখনো (প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) কেউ কোনপ্রকার অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে মাতারবাড়ীর এই খুনের ঘটনায় অভিযান চালানো হবে বলেও জানান।