দ্বীপ নিউজ ডেস্ক:
মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে টেকসই বেড়িবাঁধ – প্রধান সড়ক সহ অভ্যান্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ অপেক্ষায় আছে শুষ্ক মৌসুমের। বর্ষাকালের শেষপর্যায়ের বৃষ্টি বন্ধ হলে ও আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে শুরু হবে অপেক্ষামান উক্ত প্রকল্প সমূহের কাজ।
সদ্য সমাপ্ত মাতারবাড়ী ইউপি নির্বাচনের পর এক আলাপচারিতায় বিষয়টি দ্বীপ নিউজ টোয়েন্টিফোরকে জানান সদ্য বিদায়ী মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ।
এ ব্যাপারে মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ২০১৬ সালে মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে হাতে অর্পিত হয়েছিল অত্র এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের দায়িত্ব।
আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব করেছি এই এলাকার অবহেলিত মানুষের জন্য। তবে গত ২০ সেপ্টেম্বর ইউপি নির্বাচনে আমি পরাজিত হয়েছি, কিন্তু এই পরাজয় আমাকে ছুঁয়ে যেতে পারেনি। নির্বাচন সংগঠিত হওয়ার আগে চেয়ারম্যানি ক্ষমতার শেষপর্যায়ে এসেও মাতারবাড়ী বাসীর জন্য বড় কিছু আদায় করেছি, এবং তা বাস্তবায়ন হতে অপেক্ষামান সামনের শুষ্ক মৌসুমের জন্য।
মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ’র বর্ণনা অনুসারে মাতারবাড়ী বাসীর জন্য অপেক্ষামান বৃহৎ প্রকল্প সমূহ-
(ক) বেড়িবাঁধ: মাতারবাড়ী ও পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন ধলঘাটা ইউনিয়নকে বঙ্গোপসাগরের করাল গ্রাস থেকে রক্ষাকারী ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধটিতে সুপার ডাইক নির্মাণের কথা রয়েছে আগামী ডিসেম্বর এর মাঝামাঝি। সুপার ডাইকটি নির্মাণ হবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ মিটার উঁচু করে এবং সুপার ডাইকের ওপর দুই লেনের (মেটোরেভল পেভমেন্ট) সড়ক এবং তীরের দুই দিকে ঢাল সুরক্ষায় নেয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থা। মাতারবাড়ী – ধলঘাটার চতুর্দীকে এই সুপার ডাইকের নির্মাণ ব্যয় হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছে ৭৬০ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৬ জুন উক্ত বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। তিনি পরিদর্শন করে যাওয়ার পর উক্ত প্রস্তাবটি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক সূত্র। প্রকল্পটি এবছরের মধ্যে অনুমোদন হলে ডিসেম্বর এর মাঝামাঝি সময়ে কাজ শুরু হবে।
(খ) মাতারবাড়ীর প্রধান সড়ক: মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের প্রধান সড়ক দুই অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশ হলো চালিয়াতলি থেকে নতুন বাজার সিএনজি ষ্টেশন পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় অংশ হল সিএনজি ষ্টেশন থেকে সাইরার ডেইল পর্যন্ত।
প্রথম অংশ: চালিয়াতলি থেকে স্থানীয় নতুন বাজার সিএনজি ষ্টেশন পর্যন্ত প্রধান সড়কটির কাজ শুরু হবে সামনের শুষ্ক মৌসুমে। চালিয়াতলি থেকে রাজঘাট ব্রীজ পর্যন্ত উক্ত সড়কটি বর্তমানের চেয়ে ২ ফুট উঁচু, ২৪ ফুট প্রসস্ত করে আরসিসি ঢালাই, উভয়পাশে টেকসই ওয়াল, রাস্তার মাঝখানে অবস্থিত ছোট কালভার্টের পরিবর্তে দীর্ঘ টেকসই কালভার্ট সহ ইত্যাদি। যেটির জন্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা। এই সড়কটির জন্য ইতিমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা যায়।
দ্বিতীয় অংশ: মাতারবাড়ী সিএনজি থেকে সাইরার ডেইল (প্রকল্পের ২ নং গেইট) পর্যন্ত প্রধান সড়কটিতে ইট ও কার্পেটিং এর পরিবর্তে হবে আরসিসি ঢালাই। বর্তমান সড়কের চেয়ে আরো প্রসস্ত করা হবে। তবে এটি নির্মাণ ব্যয় সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি।
(গ) অভ্যান্তরীণ সড়ক: আগামী শুষ্ক মৌসুমে উল্লেখিত বৃহৎ এই দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ছাড়াও গ্রামীণ সড়কগুলোকেও প্রসস্ত করে আরসিসি ঢালাই এর মাধ্যমে টেকসই সড়ক নির্মাণ এর কথা রয়েছে। সড়কগুলো যথাক্রমে:
১. স্থানীয় ৪নং ওয়ার্ড সাতঘর পাড়া থেকে হিন্দু পাড়া আরসিসি ঢালাই।
২. নতুন বাজার বাংলা জার্মান সম্প্রীতি থেকে বলিরপাড়া তিন রাস্তার মোড় মাষ্টার কাশেম এর বাড়ী পর্যন্ত আরসিসি ঢালাই।
৩. স্থানীয় বলির পাড়া জামে মসজিদ থেকে খন্দারবিল মিলঘাট পর্যন্ত আরসিসি ঢালাই।
৪. মাতারবাড়ী আজিজিয়া মাদ্রাসার সড়কটি আরসিসি ঢালাই এর মাধ্যমে পৌঁছবে রাজিয়াবর বাড়ী পর্যন্ত।
উল্লিখিত প্রকল্প সমূহের অর্থায়নে থাকবেন জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকা এবং সড়ক বাস্তবায়নে এলজিইডি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে দ্বীপ নিউজ টোয়েন্টিফোর এর বার্তা সম্পাদক আ ন ম হাসান, মহেশখালী উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ কুমার দের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রকল্প সমূহের সত্যতা নিশ্চিত করেন। এবং অসুস্থতার কারণে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি পরে বিস্তারিত তথ্য দিবেন বলেও জানান।
মাতারবাড়ী ইতিহাসের সবচেয়ে ২ টি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ছিলো বেড়িবাঁধ আর প্রধান সড়ক। এই দুই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মাতারবাড়ী বাসীর আত্মসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হওয়া সহ সাধারণ মানুষের চলাচল নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলেও জানান স্থানীয়রা। একপর্যায়ে তাঁরা সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ’র সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রডি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।