“পাঠক কলাম”
“মাতারবাড়ীতে ছাত্রলীগের শেষ কাউন্সিল ও ছাত্রলীগের সোনালী অধ্যায়ের সমাপ্তি ”
বিভক্তিহীন আর অপরাজনীতির ধরা-ছোয়ার বাইরে ছিলো মাতারবাড়ীর ছাত্র রাজনীতি। তখন “কাইছার – আজিজ” নামের এক সুবর্ণ যুগলের হাতে ন্যস্ত ছিলো এই জনপদের ছাত্র রাজনীতি। সকল আওয়ামী রাজনৈতিক প্রোগ্রামে এই যুগলের নেতৃত্বে অংশ নিতো শত শত বঙ্গবন্ধু প্রেমী ছাত্রলীগ কর্মী। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় রাজপথ। “কাইছার – আজিজ” আর “স্লোগান মাষ্টার” খ্যাত সালাউদ্দিন সুজনের কণ্ঠে তোলা সেই বজ্রধ্বনির স্লোগান, মাতারবাড়ী ছাত্র রাজনীতি থেকে বিলুপ্ত প্রায়।
“কাইছার – আজিজ” এর নেতৃত্বে মাতারবাড়ী ছাত্রলীগের ইতিহাসে শেষ কাউন্সিল তথা “মাতারবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগ” এর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
“কাইছার – আজিজ” কমিটির পর “রাকিব – সাজ্জাদ”, ” কায়ুম – অহিদ” এবং বর্তমান “আজিজ – কায়ুম” কমিটি সহ স্কুল- মাদ্রাসা শাখার কমিটিগুলো উপজেলা থেকে প্যাড আকারে পাবলিশ্ড হয়েছে কিংবা এখান থেকে গিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। কোনো কাউন্সিল কিংবা ইউনিয়নে আলোচনায় বসে হয়নি।
২০১২ এর সেই “স্কুল ছাত্রলীগ” কাউন্সিল-ই শেষ কাউন্সিল।
আর সেই “কাইছার – আজিজ” সময়ের মাতারবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের
সুবর্ণ সময়ের দৃশ্যপটের স্বাক্ষী আমি একজন।
শুধু মাতারবাড়ী ইউনিয়ন নয়, জেলা থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়েও ছিলো সেই সুবর্ণ সময়ের বিস্তৃতি। কক্সবাজার জেলার “আলী-তাহের” আর উপজেলা পর্যায়ের “এম আবদুল মান্নান” সেই সুবর্ণ সময়ের ছাত্র রাজনীতির আইডল।
শৈশবে বই পড়ে বঙ্গবন্ধুকে জানার আগে, আমার পিতার মুখেই বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি। আর কৈশোর থেকেই আওয়ামীলীগের ইতিহাস জানার প্রারম্ভিকতা। মাধ্যমিক পর্যায়ে এসে আস্তে আস্তে প্রেমে পড়ি “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ” এর।
সময়টা ২০১২সালের জুন মাস।
সদ্য নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া দুরন্তপনা কিশোর আমি। যার অস্থিমজ্জায় বঙ্গবন্ধু প্রেম আর ছাত্রলীগের প্রতি ভালোবাসা।
একদিন মাতারবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক “কাইছার – আজিজ” আর মহেশখালী উপজেলার যুগ্ম আহ্বায়ক “সৈয়দ মোহাম্মদ তৌকি” এর নেতৃত্বে একটি বিশাল ছাত্র ইউনিট স্কুল ক্যাম্পাসে আসে। স্কুলের সেমিনার কক্ষে সকল স্কুল ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে মত বিনিময় আর আলোচনার পর ঘোষিত হয় “মাতারবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগ” কমিটি গঠনের জন্য কাউন্সিলের কথা।
০৬ই জুন, ২০১২
পুরো স্কুল ক্যাম্পাস এক বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে নির্বাচনের আমেজ। সেদিন যেন এক মিলন মেলার হাট বসেছিলো পুরো স্কুল ক্যাম্পাস জুড়ে।
ক্রমান্বয়ে স্কুল ক্যাম্পাসে পদার্পণ করতে শুরু করে, তৎকালীন মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি-সম্পাদক ও তাঁর সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের অঙ্গ সহযোগী সকল সংগঠনের সভাপতি-সম্পাদক সহ সকল নেতা-কর্মীরা। যেন এক বঙ্গবন্ধু প্রেমে সকলের মিলনের স্থানে পরিণত হয়েছিলো স্কুল ক্যাম্পাস।
একটু পরেই শোনা যায়, “কাইছার – আজিজ” এর সেই বজ্রধ্বনির স্লোগান। বিশাল এক বহরে পুরো জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নের সকল ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। সেই বিশাল বহরের অগ্রে ছিলো তৎকালীন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের মান্যবর সভাপতি “আলী আহমেদ” ভাই আর তাঁর পেছনেই মহেশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক “এম আবদুল মান্নান” ভাইসহ জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সকল যুগ্ম-আহ্বায়ক বৃন্দ।
আমরা সকল স্কুল ছাত্রলীগ কর্মীরাও প্রস্তুত ছিলাম তাঁদেরকে সাদরে বরণ করতে। স্কুল মাঠের প্রধান ফটক হতে সেমিনার কক্ষ পর্যন্ত স্কুল ছাত্রলীগ কর্মীরা দুই সারি হয়ে দাঁড়িয়ে ফুল ছিটিয়ে বরণ করি বিশাল সেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীর বহরকে।
ছাত্রলীগের সেই বহর স্কুল প্রাঙ্গনে প্রবেশের সাথে সাথে হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো স্কুল ক্যাম্পাস। প্রায় আটশ (৮০০) শতাধিক ছাত্র আর পাঁচশ (৫০০) শতাধিক ছাত্রীর উপস্থিতিতে হয়েছিলো সেই স্কুল ছাত্রলীগ কাউন্সিল।
প্রোগ্রামে আলোচনার পরে শুরু হয় কাউন্সিলিং প্রসঙ্গ, যা শেষ হতে হতে প্রায় সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। পরদিন স্কুল ছাত্রলীগ “আজিজ – জয়” কমিটির ঘোষণা আসে উপজেলা ছাত্রলীগের প্যাডে। আর সেই সেদিনের কক্সবাজারের সকল স্থানীয় পত্রিকায় নতুন সভাপতি-সম্পাদকের ছবি দিয়ে নিউজ হয় “মাতারবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগ” কমিটির।
সেদিন বিকেল হতেই সদ্য সভাপতি-সম্পাদক তথা “মোঃ আজিজ এবং নুরুল ইসলাম জয়” বরাবর কল আসতে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের সকল ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দসহ জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের।জেলা – উপজেলার নেতৃবৃন্দ প্রতিনিয়ত খোঁজ রাখতো স্কুল ছাত্রলীগ কমিটিসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল ছাত্রলীগ কর্মীর।
হঠাৎ করে ২০১৪সালের ডিসেম্বর মাসে,
ঘোষণা আসে, “কাইছার – আজিজ” কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণের আর বিলুপ্তির। রানিং কমিটির এই ঘোষণা আসতে না আসতেই শুরু হয় গ্রুপিং রাজনীতির মহড়া।
আস্তে আস্তে অবসান হতে থাকে সেই সোনালী অধ্যায়ের।
২০১৪ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ২য় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্রুপিং রাজনীতির মাত্রা আরো বেগমান হয়। হারিয়ে যেতে শুরু করে একতা আর সম্প্রীতির বন্ধন।
ক্রমশ গ্রুপিং রাজনীতির অবস্থান শক্ত হয়। যার কারণে,সোনালী ইতিহাস বিলুপ্তির দিকে অগ্রসর হয়। আর ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্রমান্বয়ে বাড়তে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা। আসতে আসতে শেষ হয় মাতারবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সোনালী ইতিহাস। ছাত্র রাজনীতিতে শুরু হয় ব্যক্তি স্বার্থ আদায়ের যাত্রা। যার কারণে পদদলিত হতে শুরু করে দলীয় স্বার্থ।
এমনকি অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা এমন হারে বেড়েছে যে, ২০১৪সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তৎকালীন “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল” ও “জামায়াতে ইসলামি ছাত্র শিবির” এর ইউনিয়ন ও ইউনিয়নের বিভিন্ন শাখা সহ স্কুল-মাদ্রাসার কমিটিতে পোস্টেড থাকা অনেক কর্মী ছাত্রলীগের পতাকা তলে আসে। যদি জেলা-উপজেলা পর্যায় থেকে সুষ্ঠু তদন্ত চালায় এরকম অনেক মুখোশ পরা কর্মী বেরিয়ে আসবে। যারা এখনো সুযোগের অপেক্ষায় আছে খন্দকার মোশতাকের রূপ ধারণের।
আক্ষেপ থেকে বলি,
বর্তমানে মাতারবাড়ীতে ছাত্রলীগ দাবিদার কয়জনেই জানে ছাত্রলীগের ইতিহাস। কয়জনেই জনে বঙ্গবন্ধুর সেই ত্যাগ-তিতিক্ষা আর সংগ্রামের কথা। তারা তো আওয়ামীলীগের প্রকৃত ইতিহাসও জানেনা।
কেনো আজ ইউনিয়ন পর্যায়েই বন্ধি হয়ে আছে মাতারবাড়ীর ছাত্রলীগ। উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটিতে মাতারবাড়ী থেকে স্থান পাওয়া সর্বশেষ ব্যক্তি বর্তমান মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক “এস এম আবু হায়দার”, যিনি মহেশখলাী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আর বিগত মহেশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে ” সৈয়দ মোহাম্মদ তৌকি” যুগ্ম আহ্বায়ক এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ “আলী- তাহের” কমিটিতে সদস্য ছিলেন মাতারবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি “কাইছারুল ইসলাম কায়েস”। এরপর থেকেই থেমে যায় গণ্ডি ফেরোনোর গতি।
আগে যেখানে জেলা আর উপজেলা পর্যায়ের ছাত্রলীগ নেতারা এসে সবার (ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ) সাথে বসে, আলোচনা করে কমিটি দিতো, সেখানে আজ কমিটি দেওয়ার কথা বললেই সদ্য ছাত্র রাজনীতিতে আসা ছাত্রলীগ কর্মীরা পোস্টের জন্য মাসের পর মাস পড়ে থাকে জেলা-উপজেলার কার্যালয়ে।
আজকের বর্তমানে দাঁড়িয়ে স্মৃতির সেই সোনালী অধ্যায়ের আয়োজক “কাইছার – আজিজ” কে স্যালুট।
আপনারাই মাতারবাড়ী ছাত্র রাজনীতির সোনালী অতীতের ধারক-বাহক।
সেই সাথে স্যালুট,
মাতারবাড়ী এসে একটি সুন্দর কাউন্সিল উপহার দেওয়ার জন্য তৎকালীন “কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ” এবং “মহেশখালী উপজেলা ছাত্রলীগ’ ইউনিটকে।
পরিশেষে, একটি আকাঙ্ক্ষার কথা বলে যেতে চাই,
মাতারবাড়ীতে সেই ২০১২ সালের স্কুল ছাত্রলীগের কাউন্সিলের মতো আরেকটি ছাত্রলীগের কাউন্সিল হোক।
এ চাওয়া শুধু আমার না। মাতারবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ পরিবারের সকল কর্মীর। হোক একটা বিশাল সম্মেলন, হোক কাউন্সিল।
বঙ্গবন্ধুর প্রেমে আর ছাত্রলীগের প্রতি ভালোবাসায়,
যেখানে মিলিত হবে বর্তমান জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নের সকল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও তার সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
নুরুল ইসলাম জয়
সাবেক সাধারণ সম্পাদক
মাতারবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগ