পাঠক কলাম:
ইতিহাসের সুদূর অতীতকাল থেকেই বাংলাদেশ শস্য-শ্যামলা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। তার মূলে রয়েছে নদ-নদীর অবদান। নদীই বাংলাদেশের প্রাণ।
নদীর গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। এ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে শত শত নদী। বাংলাদেশের প্রবাহিত প্রায় সব নদ-নদীই আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করেছে। হিমালয় থেকে উৎপত্তি হয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমা অতিক্রম করে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সর্বশেষ বঙ্গোপসাগরে মিশে গেছে।
এক সময় নদীকে কেন্দ্র করে সভ্যতা ও শহর গড়ে উঠেছে, এখনো উঠছে। নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। নদী প্রকৃতির দান। নদীকে নিয়ে রচিত হয়েছে গল্প, উপন্যাস, নাটক, গান। তৈরি হয়েছে কালজয়ী চলচিত্র।
শিল্পকলায়ও প্রাধান্য পেয়েছে নদী। নদীতে পাল তোলা নৌকা, ভাটিয়ালি গান এসব এখন অতীতের স্মৃতি। এক সময় নদীর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দর্শককে মাতোয়ারা করতো।
কক্সবাজারের উত্তর-পশ্চিমে চকরিয়া উপজেলা পেরিয়ে মহেশখালী দ্বীপ। দ্বীপের তিন দিকে বঙ্গোপসাগর, একদিকে কোহেলিয়া নদী। নদীর ওপর বদরখালী সেতু। সেতুটি দ্বীপকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। মাতারবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব দিকে কোহেলিয়া নদী, উত্তর দিকে উজানটিয়া নদী এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। সেই অনাদিকাল থেকে মহেশখালীর বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহনের বেশির ভাগই কোহেলিয়া দিয়েই হয়ে আসছে।
জেলার অন্যতম নদীর মধ্যে কোহেলিয়া একটি। তা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। মহেশখালীর কালারমারছড়া ও মাতারবাড়ী-ধলঘাটার মাঝখানে অবস্থিত কোহেলিয়া নদী। আদিকাল থেকে যুগ যুগ ধরে জোয়ার ভাটায় ভরা যৌবনে প্রবাহিত কোহেলিয়ার স্রোত। সম্প্রতি সময়ে মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী পুরনো এই কোহেলিয়া নদী বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে। পূর্ণ জোয়ার ছাড়া এ নদীতে কোনো ধরনের নৌ-যান চলাচল করতে পারে না। আবার জোয়ার হলেও গভীরতা কমে যাওয়ায় মাতারবাড়ী কোহেলিয়া নদীর উপর স্থাপিত ব্রিজের কারণে সকল ধরনের নৌ-যান এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে না পারায় এখানকার লবণ ব্যবসায়ী, ট্রলার মালিক ও নৌ-যানের মাঝি-মাল্লাদের কপাল পুড়েছে। পূর্ণ ভাটা হলেও এ নদী দিয়ে মালবাহী থেকে শুরু করে বড় বড় নৌযান চলাচল করতে কোনো ধরনের বাধা হতোনা কিন্তু এখন ভাটার সময় এ নদীতে তীল পরিমাণ পানিও থাকেনা।
এ নদী ড্রেজিং করে নব্যতা ফিরিয়ে দিয়ে মহেশখালীর প্রাণ কোহেলিয়া নদী কে বাঁচিয়ে রেখে নদীর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নৌ-পরিবহন যোগ্য হিসাবে গড়ে তোলাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবী জানাচ্ছি।
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, বুড়িগঙ্গাসহ অংসখ্য নদী বাংলাদেশের বুক চিরে প্রবাহিত। তবে দখল আর দূষণে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংকুচিত হয়েছে বহু নদী। কোনোটি আবার মরেও গেছে। কোথাও কোথাও মানচিত্রে নদী থাকলেও, এখন সেখানে শহর বা গ্রাম গড়ে উঠেছে। দখল, দূষণ ও প্রতিরোধে কার্যকর সুপারিশের মাধ্যমে নাব্য নদী ও নৌপথ গড়ে তোলা। খাল, বিল, জলাশয় ও সমুদ্র উপকূল রড়্গা ও দূষণমুক্ত রাখাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে নদ-নদী পুনরম্নদ্ধার ও সংরড়্গণ নিশ্চিত করার রুপকল্প ও ভিষণ ঠিক করে মরণ দশা থেকে নদীকে বাঁচাতে ২০১৪ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠন করা হয়।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্হা। উক্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ও এক জন মহিলা সদস্য সহ পাঁচ সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগন তিন বছরের জন্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত । কমিশনের চেয়ারম্যান এবং এক জন সদস্য সার্বক্ষনিক, অবশিষ্ট তিন জন সদস্য অবৈতনিক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ।
নদী রক্ষার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে নদী ভরাট, নদীর অবৈধ দখল, পানি ও পরিবেশ দূষণ, শিল্প-কারখানা কর্তৃক সৃষ্ট নদী দূষণ, অবৈধ কাঠামো নির্মাণ ও নানাবিধ অনিয়ম রোধকল্পে, নদীর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নৌ-পরিবহনযোগ্য হিসাবে গড়ে তোলাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজনে একটি কমিশন গঠনের মধ্যদিয়ে ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন প্রণীত হলেও এক্ষেত্রে সরকারের সাথে সাথে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও কাজ করছে। শুধু সরকারি এবং বেসরকারি প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেই হবে না সাধারণ জনগণকেও নদী রক্ষায় সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে, আমাদের সম্পদ আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কোহেলিয়া নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে যতাযত কতৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষন করে মাতারবাড়ী – ধলঘাটা সহ মহেশখালী তে উন্নয়ন কে দৃষ্টি নন্দন করতে সড়কপথের পাশাপাশি নদী পথের চলাচল তরান্বিত করার আহবান জানাচ্ছি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাথে সাথে পরিবেশ ও নদী ফিরে পাক হারানো ঐতিহ্য।
মোঃ বাহাউদ্দিন বাহার
সাবেক ছাত্রনেতা ও উন্নয়ন কর্মী
baharcou2009@gmail.com