সম্পাদকীয়:
আসিফ কক্সবাজারের একজন সম্ভাবনাময়ী তরুণ। বয়সে আমি আর সে হয়তো একই হবো। যে ছেলেটা কক্সবাজার শহর দাপিয়ে বেড়িয়েছে, এম্বুলেন্সে তার নিথর দেহ আমার কাছে কেমন জানি বেমানান মনে হয়েছে। একজন তরুণ যে কি না ঘোড়ার সাথে পাঞ্জা দেওয়ার শক্তি রাখে, যে তরুনদের বাহুর বলে পৃথিবীর কর্তাদের সিদ্ধান্ত বদলে যেতে পারে তেমন একজন তরুণের প্রাণ ছাড়া দেহ চার চাকার একটা গাড়ীতে অনল।
আসিফ, যে মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও বাতাসের সাথে প্রতিযোগিতা করছে স্রষ্টা কতৃক তার মৃত্যুর হুকুম তার শরীরটাকে নিথর করে দিয়েছে। আসিফের জানাজা পরবর্তী – লাশ গাড়িটি যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, মাইক থেকে একটি আওয়াজ আমার হৃদয়কে যেন একটা ধাক্কা দিলো।মাইক থেকে বলা হচ্ছিল মূর্দা( লাশ) যাচ্ছে, মূর্দার ( লাশ) গাড়ীকে সাইট দিন । যে নামটি নিয়ে এতোদিন স্লোগান উঠেছে। যে নামটি দিয়ে মানুষ তাকে প্রশংসিত করেছে, তার যে নামটার সাক্ষরে অনেক কিছু পরিচালিত হয়েছে মৃত্যু এতোটাই নির্মম, জীবন-মৃত্যুর স্থানান্তরে তার নামের অস্তিত্বই মুছে দিয়েছে।
যে মাঠে আসিফ দৌড়াতো,তার শক্তিকে শান দিতো, যে মাঠে আসিফ তার শৈশবের খেলাধূলা করতো কে জানতো সে মাঠেই তার দেহ নিথর হয়ে শুয়ে থাকবে? কেউ চাইলেও তার দেহ একবারের জন্য নড়বে না, মৃত্যুটা এমনই।
লাশের গাড়ীটি যখন রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখন কেবল একটা কথায় ভাবছিলাম আমার আর তার বয়স প্রায় একি। আমি আজ কথা বলছি আর সে বলছে না। আমি পৃথিবীকে অনুভব করছি আর সে আমার কল্পনার পরকালের বাস্তবতাকে অনুভব করছে। একদিন আগে যেটি ছিল বাস্তবতা আজকে তার কাছে সেটির কোন অস্তিত্ব নাই। যে রাস্তায় সে বাইকের সর্বোচ্চ গতি তোলেছে সে রাস্তায় আজ তার দেহটি কত নমনীয়তার সাথে কবরের দিকে যাচ্ছে।
বলছি এই পৃথিবীটা এমনই খুব বেশীক্ষণ লাগে না পাল্টে যেতে সব চিত্রপঠ। আমার কাছের আরেকজন বন্ধু ব্লাড ক্যান্সারে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করতে করতে মৃত্যুর কাছে হার মানে।তার মৃত্যুর পর থেকেই আমি তার পরিবারের কর্মকান্ড গুলো কাছ থেকে লক্ষ্য করছিলাম। দু-একমাসের ব্যবধানে সব কিছু স্বাভাবিক হয়েগেলো কেবল নেই আমার সে বন্ধুটা।তার পরিবারের হাসি-খুশি বা জীবনযাপন সব আগের মতো স্বাভাবিক হয়েগেলো।কেবল অস্তিত্বহীন হয়েগেলো সে।ঐ যে বলছিলাম পৃথিবীটা এমনই।
মৃত্যু অকাল কিংবা পূর্ণ কিছুই বুঝে না।মৃত্যু তার সময় হলে সে তার দিকে নিয়ে যায়।তাই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন ধ্রুব সত্য এই মৃত্যু ছাড়া পৃথিবী কেবল মরীচিকা।
ওয়াহেদ আমির
ছাত্র-আইন বিভাগ
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।