পাঠক:
বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী বলা হয় কক্সবাজারকে।কেনই বা বলবে না?কক্সবাজারে আছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। প্রতি বছর পর্যটনের বড় একটি লভ্যাংশ আসে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি থেকে।এক দিকে পাহাড় অন্য দিকে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের গর্জন কিংবা সমুদ্রের লোনা পানিতে একটু গা ভিজিয়ে নিজেদের ক্লান্তি দূর করবার ভাসনা থেকে দেশ-বিদেশের মানুষের আগ্রহ বা ঘুরে দেখবার ক্ষিদে আছে এই শহরকে নিয়ে। সেই ক্ষিদে মিটাবার দায়িত্বও কিন্তু কক্সবাজারের। কিন্তু সেটি কি আদৌও মিটাতে পারছে কক্সবাজার?
ছোট বেলা থেকে দেখতাম কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কোম্পানি নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতো। বীচ কার্নিভাল,পহেলা বৈশাখ, ইংরেজি বছরের শেষদিন, প্রথমদিনসহ নানা আয়োজনে মুখরিত থাকতো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সে সব অনুষ্ঠানে অতিথি করা হতো বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পীগনকে।বাংলাদেশের খ্যাতিনামা খুব কম শিল্পীই আছে যারা কক্সবাজারের কনসার্টে গান করে নাই। সে পর্যায়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কতৃক পর্যটন দিবস উপলক্ষে যে আয়োজন তাতে যে মানের শিল্পী আনা হয়েছে আমার মনে হয় এটি অনেকটা অপমানজনক। কক্সবাজার পর্যটনকে ছোট করেছে বলেই মনে হয়েছে।
এরপরে আসা যাক পর্যটনের আরো কর্মসূচিতে। ইতিমধ্যে স্থানীয়রা অনেক বিষয় নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। জেলা প্রশাসকের এক পোস্টে দেখলাম, খাবার হোটেলসহ পর্যটন কেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের অফার চলছে।কিন্তু সেগুলো কি আদৌও বাস্তবায়ন হচ্ছে? নাকি অফারের নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে সেদিকটাতে দৃষ্টি দেওয়া দরকার।বিশেষ করে খাবার হোটেল গুলোতে যে ছাড় দেওয়ার কথা,দেখা যাচ্ছে সে সব হোটেলে কোন ধরনের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
লিখতে লিখতে প্রসঙ্গের বাহিরেও আরো কিছু প্রসঙ্গ থেকেই যায়।কক্সবাজারে পর্যটকগন আসলে কোথায় যায়?কেবল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতই।হোক সেটা লাবনী পয়েন্ট কিংবা সুগন্ধা পয়েন্ট অথবা ইনানী। বীচ কেন্দ্রীক ছাড়া বিনোদনের তেমন কোন জোন কক্সবাজারে নেই বললেই চলে। যেখানে কক্সবাজার পর্যটন মানে বাই দ্যা বীচ,ফর দ্যা বীচ,অফ দ্যা বীচ।সে জায়গায়ও বীচের সৌন্দর্য কতটা রক্ষা করা যাচ্ছে? মাসখানেক আগে দেখেছি যথাযথ নজরদারির অভাবে সৈকত কি ভাবে তার দখল বুঝে নিচ্ছে। সৈকতের সেই সৌন্দর্য হারাতে বসেছি।
কয়েকটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফিশ একুরিয়াম বা ইনানী ওয়াটার পার্ক ছাড়া তেমন উল্লেখ যোগ্য কোন জোন নেই।কিন্তু একটা আন্তর্জাতিক পর্যটন শহরে কেবল এই সবই কি উপাদান?
শেখ রাসেল শিশু পার্ক হওয়ার কথা থাকলেও সেটার জন্য নির্ধারিত জায়গার গেইটে জং এসেছে কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠেনি।কক্সবাজার মানুষের বহু আশা আকাঙ্খার একটি দিক ছিলো কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম। শুরুর দিকে বেশ আলোচনায় থাকলেও স্টেডিয়ামটি কি কারণে তার পূর্ণতা পায়নি আমার জানা নেই। কক্সবাজারের গণমানুষের দাবি এই শহরে একটি স্থায়ী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু কোথায় কি পান্তা ভাতে ঘী।এটিই যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কেবল স্বপ্নই থেকে যাবে।কয়েকমাস পরে হয়তো কক্সবাজারের সাথে রেল যোগাযোগ যুক্ত হবে।কিন্তু এই যোগাযোগের ভার বহন করার জন্য কক্সবাজার তৈরী তো?
সম্প্রতি কক্সবাজার শহরের আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি। পর্যটনকে ঘিরে নানা ধরনের অপরাধের খবর অহরহ। ছিনতায়,পর্যটক হয়রানি, মাদক সংশ্লিষ্ট নানা অপরাধে ধর্ষিত যেন এই শহর। এই সবে দৃষ্টি দিতে না পারলে অপার সম্ভাবনাময়ি এই শহর হারাবে তার সৌন্দর্য ও খ্যাতি।
তাই পরিকল্পিত পর্যটন বিনির্মানে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসনের আরো আন্তরিক হওয়া উচিৎ।
লেখক: ওয়াহেদ হোছাইন আমির (গণমাধ্যমকর্মী)
সাধারণ সম্পাদক – রিপোর্টার্স ইউনিটি মহেশখালী।