কারাগার হোক শিক্ষালয়-শাস্তির জায়গা নয়।
সমাজ তাদেরকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেনি বলেই আজ তারা অপরাধী। তাই জেলে জেলে প্রশিক্ষক নিয়োগ করা হোক।শিল্প-সাহিত্য সমাবেশ হোক।জ্ঞান-নৈতিকতার চর্চা হোক। কারাবাসের নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যেই যেনো তাঁরা প্রকৃত মানুষ্যত্বের শিক্ষা পায়। এক মানুষ অন্য মানুষকে অপরাধের জন্য শাস্তি দিলে শাস্তি দানকারী মানুষের মনুষ্যত্বও আর থাকে না। সমাজে অপরাধী হওয়ার অজস্র উপাদান বিদ্যমান রেখে কোনো অপরাধীকে কৃত অপরাধের শাস্তি দেওয়াও অনৈতিক। যদিও শাস্তি দেওয়ার বিধান অাইনগতভাবে রয়েছে। একজন শাস্তিপ্রাপ্ত অপরাধী জেল-হাজতকে ডালভাত খাওয়ার এক অভিজ্ঞতা ছাড়া এর চাইতে বেশী কিছু মনে করে না, ফলে পূর্বের ন্যায় বার বার তাঁরা হয়নার মতো লাফিয়ে পড়ে অপরাধমুখী কর্মকাণ্ডের উপর। তাহলে অপরাধের বদলে শাস্তি কি সমাধান বয়ে অানলো তা প্রশ্নবিদ্ধ। এবার অাসুন একইভাবে যদি শাস্তির জায়গায় একটু অবকাশ ও শিক্ষাটা দেয়া হতো তাহলে কতটুকু সমাধান বয়ে অানতো তা অালোচনার পূর্বে অাপনাদেরকে দিয়ে যাই একটি ঘটনার উদ্ধৃতি। অামার প্রিয় জন্মভূমি মহেশখালী পান, মাছ, শুটকি, চিংড়ি, লবণ এবং মুক্তার উৎপাদন সহ সৌন্দর্যে ঘেরা বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ হিসেবে অালাদা একটি পরিচয় বহন করলেও দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশী অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত মহেশখালী । এলাকায় প্রায়ই খুন,লুটপাট, দস্যুতা, অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্ম ঘটে থাকে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা ওইসব দুর্গম এলাকায় অসংখ্যবার অভিযান চালিয়ে অস্ত্র তৈরির কারখানা অাবিষ্কারসহ জলদস্যুদের গ্রেপ্তার করেছে। হাজারো জলদস্যুর যাবত জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে শতশত জলদস্যুর পুলিশের ক্রসফায়ারে অকালে জীবন গিয়েছে কিন্ত কেউ কি অাদৌ বলতে পারবে তাতে জলদস্যুর খুন,লুটপাট,দস্যুতা কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে? অবশ্যই না সূচক অব্যয় ছাড়া উত্তরে অার কিছুই মিলবে না! কিন্ত তাঁদেরকে শাস্তির পরিবর্তে সৌহার্দ্যপূর্ণ অাচরণ ও অবকাশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকার যখন তাঁদেরকে কালো জীবন থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করার আহ্বান করেছেন, ঠিক তখনি কিন্তু তাঁরা সরকারের এই অাহ্বানে সাড়া দিয়েছে। শতাধিক জলদস্যু নিজ থেকে অস্ত্র জমা দেওয়ার মাধ্যমে অাত্মসমর্পণ করেছে । স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর উপস্থিতিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই অাত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে এমন এমন জলদস্যুর দেখাও মিলেছিল যাদেরকে ত্রিশ বছরেও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হননি। সুতরাং এ-থেকে বোঝা গেল সমাধানের জন্য শিক্ষা এবং অবকাশ একটি বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা রাখল এই বিপদগ্রস্ত মানুষকে ভালো পথের পথিক বানাতে। কাজেই শুধু শাস্তি প্রদানের এক ধরনের নিষ্ঠুর মানসিকতায় অভ্যস্ত হয়ে না পড়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো হোক,দেওয়া হোক ধর্মীয় শিক্ষা, নৈতিকতার শিক্ষা, মানবতার শিক্ষা। জাগ্রত করা হোক দেশপ্রেম। অার তা হবে নির্দিষ্ট কারারুদ্ধ সময়ের ভেতরেই , যতদিন না তাঁরা সমাজ এবং দেশের জন্য নিরাপদ নয় ততদিন তাদের শিক্ষাদান অব্যাহত থাকবে। মুক্তি দেওয়া হবে একজন অাদর্শবান ও দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে যার কাছে নিরাপদ হবে সমাজ রাষ্ট্র ও তার পরিবার। এভাবেই কারাগার হয়ে উঠুক বিপদগ্রস্ত মানুষের শুদ্ধ পথ চেনার বিদ্যালয়।
লেখক: মোহাম্মদ তারেক
শিক্ষার্থী: শহীদ সরকারি তিতুমীর কলেজ ঢাকা।