চট্টগ্রাম: বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরেও মেলেনি চিকিৎসা। সময় মতো চিকিৎসা না পেয়ে গাড়িতেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম ছগীরকে।
বর্ষীয়ান এই আওয়ামী লীগ নেতার স্বজনেরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (৯ জুন) সকালে বুকে ব্যথা অনুভব করলে শফিউল আলম ছগীরকে একটি মাইক্রোতে করে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে সেখানে ‘চিকিৎসার পরিবেশ’ না পেয়ে তাকে নগরের ওআর নিজাম রোডের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যান স্বজনেরা। বেসরকারি ওই প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকেরা করোনা রোগী সন্দেহে তাকে ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানান।
এরপর ছগীরকে পাশের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তাকে ফিরিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে তাকে পাঁচলাইশের পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দেন তাকে।
এই সময় ছগীরের স্বজনেরা জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহেদ ইকবাল বাবুর সহায়তা চেয়ে তাকে ফোন দেন। কাউন্সিলর বাবু মুঠোফোনে বিষয়টি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে জানান।
মেয়রের নির্দেশনায় ফের পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শফিউল আলম ছগীরকে। সেখানে মেয়রের হস্তক্ষেপে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হলে চিকিৎসকেরা জানান, শফিউল আলম ছগীর আর বেঁচে নেই। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
এই প্রসঙ্গে কাউন্সিলর শাহেদ ইকবাল বাবু বাংলানিউজকে জানান, তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না মেয়ে ছগীর ভাইয়ের ছেলে আমাকে ফোন দেন। আমি মেয়র মহোদয়কে বিষয়টি জানাই। তার হস্তক্ষেপে পার্কভিউ হাসপাতাল দ্বিতীয়বারে ছগীর ভাইকে ভর্তি নিতে সম্মত হলেও ততক্ষণে তিনি মারা যান।
‘হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে যে মাইক্রোতে করে তাকে বাসা থেকে নেওয়া হয়েছে- সেই মাইক্রোতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।’ যোগ করেন এই কাউন্সিলর।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অমানবিক এই আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আয়োজিত এক বৈঠকে তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকালে আমাদের থানা আওয়ামী লীগের এক সেক্রেটারি স্ট্রোক করেছিলেন। তাকে ৩-৪টি হাসপাতালে নেওয়া হলেও সিট খালি নেই- এমন অজুহাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
‘পরে যখন পার্কভিউ হাসপাতালে নেওয়া হলো তখন চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন তিনি আর বেঁচে নেই। এভাবে তো চলতে পারে না। হাসপাতালগুলোকে রোগী ভর্তি নিতেই হবে।’
চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড (করোনা) ও নন কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদান সংক্রান্ত সার্ভিল্যান্স টিমের আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। হাসপাতালে সিট খালি রেখে রোগী ভর্তি নেবে না। এটা হতে পারে না।
‘আজকে বিকেলে মুখ্যসচিব স্যারসহ বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনলাইনে শেষবারের মতো বৈঠক করেছি আমরা। আগামীকাল থেকে আইন প্রয়োগ শুরু হবে। কোভিড ও নন কোভিড সবাইকেই চিকিৎসা দিতে হবে।’
সার্ভিল্যান্স টিমের সদস্য ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. বদিউল আলম বাংলানিউজকে জানান, বেসরকারি হাসপাতালগুলো প্রতিদিন সার্ভিল্যান্স টিমের কাছে তাদের সেবা বিষয়ক তথ্য দিচ্ছে। এইসব তথ্য যাচাই করতে বুধবার থেকে জেলা প্রশাসন প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করবে।
রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টারের পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, ওই রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন ছিলো।
‘আমাদের কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসক অসুস্থ। এই কারণে আমরা আইসিইউ সেবা বন্ধ রেখেছি। যেহেতু আইসিইউ সেবা বন্ধ- তাই তাকে ভর্তি নেওয়া হয়নি।’
বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২০